বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নিরাপদ ঢাকা সৃষ্টিতে করণীয় 

  • ড. এএইচএম জেহাদুল করিম   
  • ৪ জুলাই, ২০২১ ১৫:৩৪

ঢাকার ভৌগোলিক পরিবেশের কথা বিবেচনা করে যতটা সম্ভব ঢাকার হারানো কিছু খাল-বিলকে পুনরুদ্ধার করে তাতে চলমান পানিপ্রবাহ, ড্রেইনেজ সিস্টেম ও স্যুয়ারেজ ব্যবস্থাকে গতিময় করা যেতে পারে। ড্রেইনেজ ও স্যুয়ারেজ সিস্টেমকে কার্যকরী করবার জন্য অবিলম্বে বুড়িগঙ্গা, বালু ও তুরাগ নদীতে ড্রেইজিং বা অন্যকোনো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পানির প্রবাহ চলমান করতে হবে। এসব নদীতে বর্জ্য-নিষ্কাশন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করে, এগুলোকে সচল রাখতে হবে এবং এতে করে শহরের পানিপ্রবাহের ধারাটি নদীগুলোর মাধ্যমে বেরিয়ে যেতে পারে।

Health and Sanitation Ranking সংস্থা তাদের Quality of Living: World Wide City Ranking--এর ভিত্তিতে প্রায় প্রতি বছরই ঢাকা শহরকে বিশ্বের শীর্ষ পঁচিশটি নোংরা শহরের তালিকায় দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থ স্থান দিয়ে আসছে। এ ক্ষেত্রে, অনেকদিন থেকেই প্রথম স্থানটি অধিকার করে আছে আজারবাইজানের রাজধানী বাকু। ঢাকার বাতাসে সিসার পরিমাণ বিগত বছরগুলোর তুলনায় বর্তমান সময়ে যে কিছুটা কমেছে এ ব্যাপারে কোনো সন্দেই নেই। এর মূল কারণ সম্ভবত, সাম্প্রতিককালের ধোঁয়াযুক্ত পুরাতন মোটরযানগুলোর ওপর কঠোর সরকারি নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও নিয়ন্ত্রণ।

এই পুরাতন ধোঁয়াযুক্ত গাড়িগুলো নিষিদ্ধ হবার কারণেই বর্তমান ঢাকা শহরের ক্ষেত্রে এই পরিবেশের যৎকিঞ্চিত উন্নতি ঘটেছে। তবে বায়ুদূষণ ছাড়াও বর্জ্য-ব্যবস্থাপনা, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা, ওষুধপ্রাপ্তি এবং সেই সঙ্গে হসপিটাল ও চিকিৎসার সুবিধা ইত্যাদি বিষয়ও এই র‌্যাংকিংয়ের ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।

অপরদিকে, যৌন সহিংসতা, স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি, নারীদের প্রতি সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সেই সঙ্গে তাদের অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা অর্জন, এই চার মানদণ্ডে, ঢাকার নারীরা কতটা নিরাপদ এই প্রশ্নগুলো আলোচিত হচ্ছে। অতি সম্প্রতি, Thomson Reuters Foundation তাদের একটি জরিপে নারীদের জন্য বিশ্বের যে ১৯টি শহর অনিরাপদ বলে চিহ্নিত করেছে এবং সেই মানদণ্ডে ঢাকার অবস্থান সপ্তম।

সুতরাং ঢাকা শহরের নাগরিক-সুবিধার কথা চিন্তা করলে এবং উল্লিখিত নির্দেশকগুলোকে এই নির্ধারকের বিবেচনায় আনলে, এটি সহজেই ধারণা করা যায় যে, আমরা আধুনিক ঢাকাকে নিয়ে যতই গর্ব করি না কেন পরিবেশ-স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশনের বিবেচনায়, এটি একটি নোংরা শহর।

বেশ কিছু দিন আগে, জার্মানির কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু তরুণ শিক্ষার্থী তাদের একাডেমিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অল্প সময়ের জন্য বাংলাদেশের কয়েকটি বিভাগীয় শহর পরিদর্শনে এসেছিল। আমি ব্যক্তিগতভাবে সেই সময়ে এই জার্মান ছাত্রছাত্রীদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম বিভাগীয় শহর হিসেবে, বাংলাদেশের কোন্ শহরটি তাদের কাছে সবচাইতে ভালো লেগেছে। বলাবাহুল্য, অনেক নামিদামি, বিলাসবহুল গাড়ি, রেস্তোরাঁ ও আধুনিক সুরম্য অট্টালিকা থাকা সত্ত্বেও, এদের সবাই একবাক্যে তাদের পছন্দনীয় শহর হিসেবে ঢাকার পরিবর্তে রাজশাহীকেই বেছে নিয়েছিল।

কারণ সম্ভবত, সেখানকার খোলামেলা আকাশ কোলাহলমুক্ত ও উন্মুক্ত পরিবেশ। মোটরযানের অহেতুক চাপ না থাকার কারণে, বাতাসেও সেখানে বিশুদ্ধতা রয়েছে এবং সবচাইতে বড় কথা, মানুষের চাপাচাপিতে, অন্তত দম বন্ধ হবার মতো পরিবেশ সেখানে নেই। রাজশাহীর বর্তমান মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন তার দুই মেয়াদের কার্যকালে অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে রাজশাহী শহরকে বাংলাদেশের একটি অনন্য বাসযোগ্য বিভাগীয় শহর হিসেবে রূপান্তরিত করতে সচেষ্ট রয়েছেন।

যাহোক, বাংলাদেশের অন্য শহরগুলোর চাইতে ঢাকা শহরে নগর জীবনে যে প্রচণ্ড একটা অনিয়ম রয়েছে সেটা কিছুতেই অস্বীকার করার উপায় নেই। প্রথমেই যদি আমরা ঢাকা শহরের ট্রাফিক নিয়মের কথা বলি তাহলে বলতে হবে যে, এখানে রাস্তা পারাপারের জন্য কোনোই নিয়ম-কানুন নেই; শহরের অভ্যন্তরে গাড়ি চালানোর জন্য কোনো স্পিড-লিমিটও এখানে নেই।

নিয়ম ভেঙে কোন গাড়ি কার আগে চলে যাবে এর জন্য একটা সূক্ষ্ম প্রতিযোগিতা এখানে রয়েছে। ট্রাফিক আইনের ন্যূনতম তোয়াক্কা না করে, নগর পরিবহনগুলোর বেপরোয়া ড্রাইভিংয়ের কারণে, যেকোনো বিদেশিই হঠাৎ করে আমাদের ঢাকাকে দেখে সাময়িকভাবে একটু হতচকিত হয়ে যেতে পারেন। মালিক সমিতিভুক্ত যানবাহনগুলোর জন্য নির্দিষ্ট স্টপেজ থাকলেও, এদের মধ্যে নিয়ম-কানুন বা কোনো সিরিয়াল মেনে চলতে চায় না।

এমনকি গাড়ি দাঁড় করানোর সময়ে, তারা তাদের বাঁয়ের লেইনে চলাচলকারী কোনো ব্যক্তি বা যানবাহনকে তোয়াক্কাই করে না, যার ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে এবং পথচারীরা এর জন্য অনেকটা ভীত ও অনিরাপদ বোধ করেন। বাস, মিনিবাসগুলো তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং করার ফলে, চলমান রাস্তায় দীর্ঘ যানজট লেগেই থাকে।

রাস্তা পারাপারের জন্য ঢাকায় প্রকৃত অর্থে কোনো ‘জেব্রা-ক্রসিং’ থাকলেও সেগুলোর ওপর দিয়ে ট্রাফিক নিয়ম অনুসরণ করে রাস্তা পারাপার হওয়াকে আমরা কখনই গ্রাহ্য করি না। রাস্তা পারাপারের জন্য, শতকরা একভাগ লোকও ঢাকা শহরে অবস্থিত ‘ফুট-ওভারব্রিজগুলো’ ব্যবহার করেন না; বরং নতুন স্টাইলে, চলমান একটি গাড়িকে হাত দেখিয়ে এবং সেই গাড়িকে গতি কমানোর ইঙ্গিত দিয়ে, ইচ্ছেমতো রাস্তা পার হয়ে যান এবং এটি সাম্প্রতিককালের রাস্তা পারাপারের জন্য উদ্ভূত ‘একটি স্মার্ট পদ্ধতি’ বলে বিবেচিত হয়ে আসছে।

অপরদিকে, একটি স্বাধীন দেশের রাজধানী শহর হিসেবে, এখনও ঢাকার প্রায় শতকরা ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ রাস্তাই ব্যবহারের অনুপযোগী, এবং এই ক্ষত-বিক্ষত রাস্তাগুলো পথচারীদের নিরাপদ পথচলাকে ব্যাহত করে। অথচ প্রতিবছর এগুলো মেরামত ও রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণের নামে ঢাকা সিটি করপোরেশন কোটি কোটি টাকা খরচ করে; এই অর্থ কীভাবে ব্যয় হয় তা নগরবাসী জানেন না।

ঢাকা শহরের অন্য একটি খারাপ দিক হলো এই যে, এখানে সামান্য কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতেই সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে মানুষের নগরজীবন। এখানে শহর এলাকা পর্যাপ্ত ড্রেইনেজ ও স্যুয়ারেজ সিস্টেম নেই, এরই কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই ঢাকা শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে একেবারে অচল হয়ে পড়ে। নগর বিশেষজ্ঞ এবং পানি বিজ্ঞানীদের মতে, সাংঘাতিক ধরনের জনসংখ্যার চাপে রাজধানী ঢাকা নগরীর আশপাশে খাল-বিলগুলো সম্পূর্ণভাবে ভরাট হয়ে গেছে।

একটি জরিপে জানা যায় যে, আমাদের ঢাকা শহরের এক সময়কার ৪৪টি খালের মধ্যে কমপক্ষে ৩০টি খাল হয় শুকিয়ে গেছে, নতুবা এগুলোকে ভরাট করে সম্পূর্ণভাবে বিলীন করে দেয়া হয়েছে। যেকোনো আর্কিস্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারই এই কথাটি স্বীকার করবেন যে, এসব ভরাট করা খাল-বিলগুলোই হতে পারত আমাদের আধুনিক ঢাকার পরিকল্পিত স্যুয়ারেজ ব্যবস্থার অংশ। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, এসব খাল-বিলগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ দূরে থাক, বরং এগুলোকে অন্যায়ভাবে ভরাট করে ঘর-বাড়ি স্থাপন করে পানির সহজ প্রবাহকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নগর গবেষকরা এমনও মনে করছেন যে, এই অবস্থা চলতে থাকলে এবং বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না নিলে দুই জেনারেশনের পর, ঢাকা শহর প্রতিয়িতই জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত থাকবে।

ঢাকা শহরের অপরিচ্ছন্নতার আর একটি বিশেষ দিক হলো আমাদের নাগরিক সমাজের লিটারিং সম্পর্কিত অজ্ঞতা; যেখানে সেখানে ময়লা ও বর্জ্য নিষ্কাশন, যেখানে সেখানে উন্মুক্তভাবে থুতু ফেলা এবং স্যানিটেশন সম্পর্কে আমাদের মানুষের সম্পূর্ণ উদাসীনতা মূলত জনগণের স্বাস্থ্যের উপর এক বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলছে। সিটি করপোরেশনের অতি প্রাচীনতম লৌহনির্মিত বর্জ্য-ফিলগুলো প্রযুক্তিজ্ঞান-সম্পন্ন নয় এবং সম্ভবত সে কারণেই মানুষ এগুলোকে ঠিকভাবে ব্যবহার করে না, এগুলোর ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতাও নেই।

অনেকটা সে কারণেই গার্বেজ-ফিলগুলোর মধ্যে ময়লা না ফেলে অনেকেই সেগুলো বাইরে উন্মুক্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বা দূর থেকে ছুড়ে ফেলে দেয়, যা পরিবেশকে করে দুর্গন্ধযুক্ত। এই ক্ষেত্রে, অনেকে মনে করেন যে, সামাজিক পরিবেশ রক্ষার্থে social mobilization programs-এর মাধ্যমে আমাদের জনগণের সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে। কিন্তু বাস্তবে আমাদের সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির এই ধরনের কৌশলগুলো প্রকৃত অর্থে সর্বদাই পূর্ণাঙ্গভাবে কাজ করে না। বিধায় এই ধরনের কার্যকলাপকে ‘reward এবং ‘punishment’-এর আওতায় আনা প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, সিঙ্গাপুরে লিটারিংয়ের জন্য একজন ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিকভাবে অর্থ-জরিমানা করা হয় এবং আইনগত বাধ্যবাধকতার কারণেই, আমরা নিজেরাও সেই দেশে লিটারিং সম্পর্কে সচেতন থাকি; যেখানে সেখানে একটি ছেঁড়া কাগজও ফেলতে সাহস পাই না।

চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় গুয়াংসু শহরের একটি সরকারি আবাসিক এলাকার জন্য প্রস্তাবিত খসড়া আইনে বলা হয়েছে যে থুতু ফেলা, ফুল ও সবজি চাষের জন্য গ্রিনহাউস নির্মাণ, যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং এবং বাড়ির কার্নিশে কাপড় শুকানোর জন্য শাস্তির বিধান আছে। এই বিধানে, শাস্তিপ্রাপ্ত একজন অধিবাসীকে তাৎক্ষণিকভাবে আবাসিক এলাকা থেকে বের করে দেয়া হয়; বাংলাদেশেও এই ধরনের কঠোর নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা বাঞ্ছনীয়।

ঢাকার ভৌগোলিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশকে রাখবার জন্য কিছু সুপারিশ করতে চাই-

প্রথমেই ঢাকার ভৌগোলিক পরিবেশের কথা বিবেচনা করে যতটা সম্ভব ঢাকার হারানো কিছু খাল-বিলকে পুনরুদ্ধার করে তাতে চলমান পানিপ্রবাহ, ড্রেইনেজ সিস্টেম ও স্যুয়ারেজ ব্যবস্থাকে গতিময় করা যেতে পারে। ড্রেইনেজ ও স্যুয়ারেজ সিস্টেমকে কার্যকরী করবার জন্য অবিলম্বে বুড়িগঙ্গা, বালু ও তুরাগ নদীতে ড্রেইজিং বা অন্যকোনো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পানির প্রবাহ চলমান করতে হবে।

এসব নদীতে বর্জ্য-নিষ্কাশন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করে, এগুলোকে সচল রাখতে হবে এবং এতে করে শহরের পানিপ্রবাহের ধারাটি নদীগুলোর মাধ্যমে বেরিয়ে যেতে পারে। অন্য অনেক বিষয়ের মতো এই বিষয়েও, প্রয়োজনে দেশি ও বিদেশি সংস্থার জ্ঞান ও কারিগরি সহায়তা নেয়া যায়। সর্বোপরি, এসব নদীর তীরে অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলার ক্ষেত্রে, BIWTAকে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা ও ক্ষমতা প্রদান বাঞ্ছনীয়।

নোংরা-আবর্জনা যেন যেখানে সেখানে ফেলা না হয় সেজন্য আইন প্রণয়ন করা বাঞ্ছনীয়, সেই আইনের ব্যত্যয়ে সিঙ্গাপুরের মতো তাৎক্ষণিক শাস্তির ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন। লিটারিং ও যেখানে সেখানে থুতু ফেলার জন্য আর্থিক জরিমানার বিধান থাকা প্রয়োজন। এলাকার অধিবাসীদের প্রত্যেকে তাদের নিজ নিজ বাড়ি, বাসস্থান, অফিস, দোকানপাটের সামনে ও আশপাশে বাধ্যতামূলকভাবে পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। আধুনিক নগরী হিসেবে ঢাকাকে গড়ে তুলবার জন্য এবং অত্যন্ত ছিমছাম ও গোছানো শহর হিসেবে এর উন্নয়নের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন, নাগরিকদের নিরাপদ রাস্তাঘাট ও নিরাপদ ফুটপাত।

নিরাপদ রাস্তা বলতে আমরা সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টির দিকেও দৃষ্টি দিতে বলছি, যেখানে একজন পথচারী যেকোন সময়ে রাস্তায় নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবে। সেই সঙ্গে ফুটপাত হতে হবে দোকানপাট ও যানবাহনমুক্ত; যেখানে সেখানে ফুটপাতের সহজ চলাচল বন্ধ করে যানবাহন পার্কিং আইন করে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিতে হবে।

কোনো হকার-ব্যবসা রাস্তার পাশে থাকা বাঞ্ছনীয় নয়; বরং হকারদের জন্য ফুটপাতের পরিবর্তে, অন্য কোথাও আলাদা স্থানে ব্যবসার জন্য নির্ধারিত স্থান করে দিতে হবে। এই পরিকল্পনায় নিয়োজিত সংস্থাগুলো তাদের মাস্টার-প্ল্যান তৈরি করবেন এবং সেগুলোকে বাস্তবে কার্যকর করবেন।

নিরাপদ ঢাকা গড়ার কর্মপরিকল্পনার মধ্যে নাগরিক সুবিধার পাশাপশি ঢাকামুখী মানুষের যে প্রবল স্রোত তা অন্যদিকে প্রবাহিত করা। মেগাসিটি ঢাকায় বর্তমানে এককোটি আশি লক্ষ মানুষ বসবাস করছে; এদের অনেকেই বিভিন্ন কর্মপ্রাপ্তির উদ্দেশ্যে এখানে আসছে।

যেখানে কৃষিজমির শ্রমিকের দুষ্প্রাপ্যতা রয়েছে সেখানে এসব শ্রমজীবীরা রিকশা বাহনের মাধ্যমে জীবিকানির্বাহের পথটি বেছে নিতে পছন্দ করে। বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে, গ্রামেই যদি জীবিকার ব্যবস্থা করা যায় তাহলে অনেক লোকই ঢাকা আসার অপ্রয়োজনিয়তা অনুভব করবে। জাতীয় প্রবৃদ্ধির বিষয়টি লক্ষ রেখে গ্রামের মানুষকে জীবনের তাগিদে যাতে শহরে ছুটতে না হয়, তার জন্য গ্রামবান্ধব কর্মসূচির প্রশংসনীয় সংস্থান রাখা হয়েছে এবারের বাজেটে। এতে নিঃসন্দেহে ঢাকা আসার প্রবণতা কমবে।

রাজধানী ঢাকার অভিজাত বিপণি বিতানগুলোর মতো আমাদের পথচারীদেরকে রাস্তা পারাপারে আকৃষ্ট করবার জন্য রাজধানী শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম স্থানে ‘ফুট ওভারব্রিজ’গুলোতে ‘বিদ্যুৎচালিত চলন্তসিঁড়ি বা এস্কেলেটর’ স্থাপন করা বাঞ্ছনী। এতে করে পথচারীরা ওভারব্রিজ ব্যবহার করে রাস্তা পার হতে বেশি আগ্রহী হবে। রাস্তা-ঘাটগুলোতে জেব্রা-ক্রসিংয়ের মাধ্যমে পথচারীদের রাস্তা পারাপারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং এই বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশদেরকে বন্ধু হিসেবে পথচারীদেরকে সাহায্য করতে হবে।

লেখক: অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

এ বিভাগের আরো খবর